ছাগল এর কিছু রোগ ও তার লক্ষন:
Some diseases of goats and their symptoms:
1.পিপিআর:- রোগের লক্ষণ:- তাপমাত্রা 103ডিগ্ৰির উপরে থাকবে, শর্দি, অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা, জিব্বাতে ঘাঁ হওয়া, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা, খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া, অ-স্বাভাবিক দুর্বলতা এবং জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়।
2.খুরা:-রোগের লক্ষন:- তাপমাত্রা 103ডিগ্ৰির উপরে থাকবে। খুরা রোগের ক্ষেত্রে পায়ের খুঁরে এবং শ্বাসনালী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খুরা রোগে আক্রান্ত ছাগলের মুখের চারপাশে ও জিব্বায় প্রচুর পরিমাণ ক্ষত সৃষ্টি হয়। শর্দি অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা, জিব্বাতে ঘাঁ হওয়া, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা, খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া, স্বাভাবিক দুর্বলতা এবং জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়।
3.গোটপক্স:- রোগের লক্ষণ:- গোটপক্সে আক্রান্ত ছাগলের নাক, মুখ, চোখ ও শরীরের লোম বিহীন বিভিন্ন অংশে গুটি সাদৃশ্য কিছু গোটা দৃশ্যমান হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে তাপমাত্রা অ-স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়। খাবার খাওয়া ছেড়ে দেয়। এবং শারীরিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়।
4.গলাফোলা:-রোগের লক্ষন:-চোয়ালের চারপাশে ও গলার নিচে পানির মত পুটলি জমতে দেখা যায়। তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং প্রচুর পরিমান পাতলা পায়খানা করে এবং জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়।
5. শর্দি ও কাশিঁ:-রোগের লক্ষন:- নাকে প্রচুর পরিমাণ শ্লেষ্মা দেখা যায় এবং এক-নাগাড়ে কাশতে থাকে।
6.গ্যাস ও পেটে ব্যাথা:-রোগের লক্ষণ:-পেট অ-স্বাভাবিক ভাবে ফুলে যায়। জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়। পেটের ব্যাথায় কোঁকাতে থাকে এবং মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে।
7. নিমোনিয়া:-রোগের লক্ষণ:-শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, হা করে শ্বাস নেয় শ্বাস নেওয়ার সময় শ্ব-শ্ব শব্দ হয়। বুকে শ্লেষ্মা জমা থাকে। খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়া এবং দিনদিন শুকোতে থাকে।
8.এলার্জি এবং চুলকানি:-রোগের লক্ষণ:-লোমগুলো বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া, চামড়ার অবশিষ্ট অংশের ঝরে পড়া, এমনকি ছাগলটি তার শরীরকে কোন কিছুর সঙ্গে চুলকানোর জন্য খুব চেষ্টা করে।
9.খাদ্যে অনিহা:-রোগের লক্ষণ:-খাবার একেবারেই খেতে চায় না এবং দিনদিন শুকাতে থাকে।
10.সময়-মতো হিটে না-আসা:-রোগের লক্ষণ:- ছাগল সাধারণত 6থেকে10 মাস বয়সের মধ্যে হিটে আসে। এবং বাচ্চা দেওয়ার পরে 1থেকে3 মাসের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে হিটে চলে আসে।
উক্ত সময়ের মধ্যে ছাগল হিটে না আসলে ছাগলের শরীরে কোন রোগ, যেমন:- কৃমি, শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ হরমোনের স্বল্পতা, অতিরিক্ত মেদ, জরায়ুতে সিস্ট, পাথর অথবা ইনফেকশনের মতো মারাত্মক সমস্যা আছে বলে গণ্য করে চিকিৎসা চালাতে হবে।
11.অকাল গর্ভপাত:-রোগের লক্ষণ:-ছাগল মৃত বাচ্চা প্রসব করাকে অকাল গর্ভপাত বলে।
এক্ষেত্রে আঘাত জনিত কারণ, ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে, ইনব্রিডিং করানো, মা ছাগলের পুষ্টি স্বল্পতা থেকে বাচ্চার পুষ্টি ব্যাহত হওয়া ইত্যাদি কারণে অকাল গর্ভপাত হতে পারে।
12.কৃমি দ্বারা আক্রান্ত:-রোগের লক্ষণ:-শরীরের লোম উস্কোখুস্কো হয়ে যাওয়া, খাদ্যে অনীহা, পেট মোটা হয়ে যাওয়া, পায়খানা নরম হওয়া, পায়খানার সাথে কৃমি পড়া, দিন দিন শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখে বুঝতে হবে ছাগল কৃমি দ্বারা আক্রান্ত।
13.ম্যাটসাইটিস(ওলান প্রদাহ):-রোগের লক্ষণ:- বাচ্চা দেওয়ার আগ মুহূর্তে অথবা বাচ্চা দেওয়ার পরে, ছাগলের ওলান ফুলে যাওয়া, লালচে আভা তৈরি হওয়া, ওলানে ফুসকুড়ি পড়া, ওলান শক্ত হয়ে যাওয়া, ওলান থেকে দুধের পরিবর্তে পুজ অথবা রক্ত আসা, এছাড়া ওলানে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থেকে, অতিরিক্ত ঠান্ডা অথবা অতিরিক্ত গরম থাকা।
এগুলো দেখেই বুঝতে হবে ছাগলের ম্যাটসাইটিস রোগ হয়েছে।
14.সদ্য প্রাপ্ত বাচ্চার নাভিতে ইনফ্রেকশন:-রোগের লক্ষণ:- নাভিতে পুজ রক্ত আসা, নাভি অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া এবং গুটি তৈরি হওয়া, এ অবস্থা থেকে নাভিতে পোকা পড়ে ভেতরের অংশ খেয়ে ফেলে।
এগুলো দেখে আমাদেরকে নির্দিষ্ট করতে হবে নাভিতে ইনফ্রেকশন হয়েছে।
15. খাদ্যে বিষক্রিয়া:-রোগের লক্ষণ:-নাক মুখ দিয়ে লালা পড়া, জোরে জোরে চিৎকার করা, পেট ফুলে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হওয়া, পাতলা পায়খানা হওয়া, ইত্যাদি দেখে অনেক সময় বোঝা যায় খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়েছে।
খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে, উক্ত বিশ শরীরের বিভিন্ন অংশে মিশে, কোন লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই ছাগলটি মারা যায়।
16. আঘাতজনিত কারণে যেকোনো ধরনের ক্ষত অথবা শরীরের যেকোন অংশের হাড় ভাঙ্গার মত বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে:-রোগের লক্ষণ:- খুঁড়িয়ে হাঁটতে থাকা, পায়ের ওপরে ভর করতে না পারা, শরীরের কোন বিশেষ অঙ্গের হাড্ডি নড়াচড়া করা ইত্যাদি দেখে বুঝতে হবে ছাগলের হাড় ভেঙ্গে গেছে। ছাগলের শরীরের কোন অংশের হাড় ভেঙে গেলে উক্ত স্থানে ফুলে যায় এবং ভাঙ্গা স্থানে হাত দিলে ছাগল ব্যথা অনুভব করে এবং জোরে জোরে চিৎকার দিতে থাকে।
এছাড়া আঘাতজনিত কারণে কোন জায়গায় ক্ষত সৃষ্টি হলে, উক্ত জায়গা থেকে রক্ত বের হওয়ার মত দৃশ্যমান কিছু উপলব্ধি করা যায়।
17.গাউট ইডিমা:-রোগের লক্ষণ:- শরীরের কোনো বিশেষ স্থানে টিউমারের মতো সাদৃশ্য ফোলা অংশ দৃশ্যমান হবে উক্ত স্থানে হাত দিলে তুলতুলে অনুভূত হবে এবং ওই স্থানে পচা রক্ত অথবা পুঁজ ও গাড়ো ময়লাযুক্ত পানির মতো কোন কিছু জমা থাকবে।
18.টিউমার:-রোগের লক্ষণ:- শরীরের চামড়ার নিচে এবং মাংসের উপরে দৃশ্যমান ফোলা এবং তুলনামূলক শক্ত অনুভূত হবে।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা ধরে নিতে পারি এটা টিউমার।
(তবে, শতভাগ নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত হবে বলে মনে করি।)
19. প্রস্রাবে ইনফেকশন:-রোগের লক্ষণ:-এ রোগের ক্ষেত্রে, প্রস্রাব তুলনামূলক দুর্গন্ধযুক্ত এবং প্রস্রাবের সাথে পুঁজ, পচা রক্ত অথবা ধূসর বর্ণের পিচ্ছিল জাতীয় গন্ধযুক্ত পদার্থ আসতে পারে। এছাড়াও প্রস্রাবের রং তুলনামূলক গারো হলুদ ধূসর অথবা বাদামি এবং খয়েরী রঙের হতে পারে।
প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে ছাগল ঘনঘন প্রস্রাব করে এটাও এ-রোগের একটা অন্যতম লক্ষণ।
20. মূত্রনালীতে পাথর জমা হওয়া:-রোগের লক্ষণ:-বিশেষ করে পাথর জমা হয় প্রস্রাবের থলিতে। উক্ত পাথর থলে থেকে উপচে বের হয়ে আসার জন্য প্রস্রাবের নালীতে এসে জমা হয়। এক্ষেত্রে জমাকৃত পাথর প্রস্রাবের রাস্তা বাধাগ্রস্থ করে প্রস্রাব বাহিরে আসতে দেয় না। উক্ত সময়ে প্রস্রাবের নালী অস্বাভাবিক ফুলে যায় ও প্রস্রাব করতে না পেরে চিৎকার করতে থাকে।
এক্ষেত্রে প্রস্রাবের নালীতে হাত দিলে, ছোট-বড় পাথর খন্ড হাতে উপলব্ধি করা যায়।
21.পরজিবি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে:-রোগের লক্ষণ:- উকুন, আঠালি, মাইট এই সাদৃশ্য কিছু পরজীবী প্রাণী লোমের গোড়ায় লোমের মাঝের অংশে ছাগলের ত্বকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
এগুলো ছাগলের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ রক্ত খেয়ে ছাগলকে দুর্বল করে দেয়। এছাড়াও এই পরজীবী প্রাণী গুলোর কারণে চামড়ার বড় ধরনের ক্ষতি সাধিত হয়।
22.ডেলিভারির পূর্বে জরায়ু বাইরে বের হয়ে আসা:-রোগের লক্ষণ:- শরীরে ক্যালসিয়াম আয়রন জিংক এই ধরনের ভিটামিনের স্বল্পতার কারণে বাচ্চা প্রসবের পূর্ব মুহূর্তে ছাগলের জরায়ু দৃশ্যমানভাবে বাহিরে চলে আসে।
23.আমাশা:-রোগের লক্ষণ:- আমাশা রোগের ক্ষেত্রে, পায়খানার সঙ্গে তুলনা মূলক নরম ও পিচ্ছিল পদার্থ নির্গত হতে থাকে। এটা পায়খানা হওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। ছাগলের পেটে ব্যথা করে এবং পায়খানা করতে প্রচুর কষ্ট হয়।
24.পাতলা পায়খানা:-রোগের লক্ষণ:-পাতলা পায়খানা একটি দৃশ্যমান রোগ। স্বাভাবিকের থেকে নরম ও তুলনামূলক একেবারেই নরম পায়খানাই হলো পাতলা পায়খানা।
পেটে অতিরিক্ত কৃমি, গ্যাসর্ফম করা, ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত রোগে পাতলা পায়খানা, হজমের সমস্যা, পচা-বাসি খাবার খাওয়া, ইত্যাদি আরো অনেকগুলো কারণে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
25.লোম ঝরে যাওয়া:-রোগের লক্ষণ:- 12মাস ছাগলের লোম পরিবর্তন হতে থাকে এবং কিছু কিছু লোম ঝরতে থাকে। এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় অ-স্বাভাবিক ভাবে শরীরের লোম ঝরতে থাকে। এতে করে শরীরের চামড়া পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়ে যায়। বিশেষ করে এলার্জি জাতীয় সমস্যা তৈরি হলে, পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হলে এবং জিংকের স্বল্পতার কারণে অ-স্বাভাবিক ভাবে লোম ঝরতে পারে।
0 Comments
We Replay You As Soon As Possible